![]() |
আধুনিক বিশ্বে সবচেয়ে সম্মানীয় পুরস্কার হলো নোবেল পুরস্কার। ১৮৯৫ সালে এই পুরস্কারের স্বপ্নদ্রষ্টা ও প্রবর্তক আলফ্রেড নোবেল তার সম্পত্তির উইলে এই পুরস্কারের কথা লিপিবদ্ধ করেন। পরবর্তীতে ১৯০১ সাল থেকে অদ্যাবধি এই পুরস্কারের ধারা বিদ্যমান। যুদ্ধ বিধ্বস্ত এই বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টার স্বীকৃতি স্বরূপ নোবেল শান্তি পুরস্কার এক অনন্য অর্জন হিসেবে বিবেচিত হয়। আর বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় সবচেয়ে অগ্রগামী প্রতিষ্ঠান হলো জাতিসংঘ। সফলতার চেয়ে ব্যর্থতার বেশি হওয়া সত্ত্বেও এই প্রতিষ্ঠান ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর কর্মতৎপরতা অনুপ্রেরণাদায়ক।
গত আট দশক ধরে, জাতিসংঘ ও এর বিভিন্ন বিশেষায়িত সংস্থা, সংশ্লিষ্ট তহবিল, কর্মসূচি এবং কর্মীরা মোট ১২ বার নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হয়েছে। এরমধ্যে জাতিসংঘের শরণার্থী হাইকমিশনার (UNHCR) ১৯৫৪ এবং ১৯৮১ সালে মোট দুইবার এই বিখ্যাত পুরস্কারটি অর্জন করেছে। এছাড়া, জাতিসংঘের দুইজন মহাসচিব দ্যাগ হ্যামারশোল্ড ও কফি আনান এই পুরস্কার লাভ করেছেন। তন্মধ্যে কফি আনান ও জাতিসংঘ এক সাথে এই পুরস্কারটি পেয়েছিলেন।
নিচের বর্ণনায় সংক্ষিপ্ত সারে জাতিসংঘ ও এর সহযোগী সংগঠনের নোবেল বিজয়ের কথা:
#১ রালফ বুঞ্চ (Ralph Bunche) ফিলিস্তিন সংঘাতে জাতিসংঘের মধ্যস্থতাকারী হিসাবে ১৯৫০ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন। নোবেল পুরস্কারের ইতিহাসে তিনি ছিলেন প্রথম আফ্রিকান আমেরিকান যিনি এই পুরস্কার লাভ করেছেন।
![]() |
প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ হিসেবে নোবেল পান রালফ বুঞ্চ |
![]() |
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক কমিশন (UNHCR) |
#৩ ১৯৬১ সালে জাতিসংঘের দ্বিতীয় মহাসচিব দ্যাগ হ্যামারশোল্ড মরণোত্তর নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন। এই পুরস্কার ঘোষণার সময় নোবেল শান্তি কমিটি বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় দ্যাগ হ্যামারশোল্ডের দৃঢ়চেতনার প্রশংসা করে।
![]() |
জাতিসংঘের দ্বিতীয় মহাসচিব দ্যাগ হ্যামারশোল্ড |
#৪ ১৯৬৫ সালে শিশু অধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের তহবিল (UNICEF) শান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করে। নরওয়ের নোবেল শান্তি কমিটির মতে, UNICEF যে প্রতিপাদ্য নিয়ে কাজ করে তা কোনো নিষ্ঠুর মানুষের ক্ষেত্রেও অস্বীকার করা সম্ভব নয়।
![]() |
শিশু অধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের তহবিল (UNICEF) |
#৫ ১৯৬৯ সালে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (ILO) শ্রমিক অধিকার রক্ষায় যুগোপযোগী অবদানের জন্য শান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করে। এই সংস্থার মূল প্রতিপাদ্য হলো, "If you desire peace, cultivate justice.", অর্থাৎ, যদি তুমি শান্তি চাও, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করো।
#৬ ১৯৮১ সালে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক কমিশন (UNHCR) দ্বিতীয়বারের মতো শান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করে। জাতিসংঘের সংস্থা গুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশিবার নোবেল পুরস্কার লাভ করে এই সংস্থা।
![]() |
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশন UNHCR |
#৭ ১৯৮৮ সালে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশন শান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করে। শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও শান্তি রক্ষায় এই মিশনের কর্মতৎপরতার প্রশংসা করেছে নোবেল শান্তি কমিটি।
![]() |
জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী |
#৮ ২০০১ সালে জাতিসংঘ ও কফি আনান সমন্বিতভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কার পান। এবারই প্রথমবারের মতো জাতিসংঘ সরাসরি নিজে এই পুরস্কার পায়। অন্যদিকে কফি আনান ছিলেন দ্বিতীয় মহাসচিব যিনি নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন।
![]() |
নোবেল বিজয়ী জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনান |
#৯ ২০০৫ সালে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (IAEA) এবং এর মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলবারাদেই সমন্বিতভাবে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান। পারমাণবিক অস্ত্র যেভাবে বিশ্বকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছে তার থেকে পরিত্রাণের জন্য এই সংগঠনের ভূমিকা অপরিসীম।
![]() |
IAEA-এর নোবেল বিজয়ী সাবেক মহাপরিচালক মোহাম্মদ এলবারাদেই সাধারণ পরিষদে ভাষণ দিচ্ছেন। UN Photo/Eskinder Debebe |
![]() |
IPCC-এর সাথে নোবেল বিজয়ী আলবার্ট আর্নল্ড |
#১১ ২০১৩ সালে রাসায়নিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ সংস্থা (OPCW) শান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করে। আন্তর্জাতিকভাবে রাসায়নিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণে এই সংস্থার তৎপরতা প্রশংসনীয়।
![]() |
OPCW মহাপরিচালক আহমেত উজুমকু 11 অক্টোবর 2013-এ সংস্থার নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী উপলক্ষে মিডিয়াকে ভাষণ দিচ্ছেন। ছবি: OPCW |
#১২ ২০২০ সালে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (WFP) ক্ষুধার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য শান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করে।
এক নজরে জাতিসংঘের বিভিন্ন নোবেল বিজয়ী সংস্থা ও ব্যক্তি:
২০২০ - WFP তথা বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি
২০১৩ - OPCW তথা রাসায়নিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ।
২০০৭ - IPCC and Al Gore Jr. জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধে।
২০০৫ - IAEA ও এর মহাপরিচালক মোহাম্মদ আল বারাদেই।
২০০১ - UN ও এর তৎকালীন মহাসচিব কফি আনান।
১৯৮৮ - UN-এর শান্তিরক্ষী মিশন।
১৯৮১ - UNHCR তথা শরণার্থী বিষয়ক কমিশন।
১৯৬৯ - ILO তথা আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা।
১৯৬৫ - UNICEF তথা জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক তহবিল।
১৯৬১ - জাতিসংঘের দ্বিতীয় মহাসচিব দ্যাগ হ্যামারশোল্ড।
১৯৫৪ - UNHCR তথ্য শরণার্থী বিষয়ক কমিশন।
১৯৫০ - Ralph Bunche ফিলিস্তিন সংকট নিরসনের প্রচেষ্টায়।
Nobel prize, United Nations