আমেরিকার মালিক কে?
অ্যাংলো-স্যাক্সনরা মনে করে যে তারা আমেরিকার মালিক। একারণেই হয়তোবা শ্বেতাঙ্গদের আমেরিকান, নিগ্রদের আফ্রিকান-আমেরিকান, আর আমেরিকার আদিবাসীদের রেড ইন্ডিয়ান বলা হয়। অর্থাৎ কোনো প্রকার বিশেষণ ছাড়া নির্ভেজাল আমেরিকান শুধু তারাই এবং যে শ্বেতাঙ্গরা তাদের পছন্দের। কিন্তু তারা ভুল। তারা যে ভুল এটা তারা জানে না, কিন্তু তারা অবশ্যই ভুল।
আমেরিকায় কালোরা তো কোনো কিছুরই মালিক নয়। এমনকি তারা তাদের জীবনেরই মালিক নয়। তাদের জীবনের মূল্যবান সম্পদ নয়, যে কোনো সময় তারা জীবিত থাকার অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে পারে। তাহলে, আমেরিকার মালিক কে? এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া আসলে অনেক কঠিন। ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির বিচারে একাধিক সত্য প্রতিয়মান হতে পারে।
স্বাভাবিকভাবে কোনো ভূখণ্ডের আদি অধিবাসীরা সেই ভূখণ্ডের মালিক। সেই দিক দিয়ে রেড ইন্ডিয়ানরা আমেরিকার মালিক। কিন্তু তারা আজ প্রায় নিশ্চিহ্ন; অ্যাংলো-স্যাক্সন আর অন্যান্য সাদা চামড়ার ইউরোপীয়দের সভ্যতার দাপটে তাদের খুঁজে পাওয়া দায়। অদ্ভুত হলেও সত্য, ইউরোপীয় বন্দুকের চেয়ে ইউরোপীয় রোগের কারণে বেশি রেড ইন্ডিয়ান মারা পড়েছে। এখন তাদের জায়গায় মালিকের আসনে সমাসীন ইউরোপীয় বংশোদ্ভূত শ্বেতাঙ্গরা। তারাই সংখ্যাগরিষ্ঠ, কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠতাই কি মালিকানার একমাত্র শর্ত? আর প্রতিপত্তি, নিয়ন্ত্রণ, দখলদারিত্ব বজায় থাকা ছাড়া মালিকানার কিইবা মূল্য আছে? এই প্রশ্নের উত্তরেই শুরু হয় মালিকানার আসল খেলা।
আমেরিকার আসল মালিক হল জায়নিস্ট ইহুদিরা। তারা সবকিছুর মালিক। কারণ, তারা আমেরিকানদের মস্তিষ্কের মালিক; অর্থাৎ আমেরিকানদের মস্তিষ্ক কিভাবে চিন্তা করবে, কি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে তা তারা নিজেদের স্বার্থ অনুযায়ী রূপদানে সক্ষম। কেননা তাদের হাতে রয়েছে এমন যন্ত্র সরঞ্জামাদি যেগুলো তারা গত শতাব্দী ধরে আমেরিকানদের মস্তিষ্ক নিয়ন্ত্রণে সফলতার সাথে ব্যবহার করে আসছে। এমনকি এখন আর তাদের তেমন প্রোগ্রামিংও করা লাগে না।
সেই যন্ত্র সরঞ্জামাদি কোনগুলো? স্পষ্টতই তা হলো গনমাধ্যম - প্রিন্ট মিডিয়া, রেডিও-টেলিভশন এবং বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য পৃথিবীর সবচেয়ে ধূর্ত প্রপাগান্ডা যন্ত্র হলিউড, নেটফ্লিক্স, ডিজনি, হুলু আর এইচবিওর মতো প্লাটফর্ম। প্রিন্ট মিডিয়ার মধ্যে রয়েছে, সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন, নিবন্ধ, বই (উপন্যাস, কথাসাহিত্য, নন-ফিকশন) প্রকাশনা সংস্থা, সোশ্যাল মিডিয়া এবং তাদের ইনফ্লুয়েন্সার বাহিনী (Army of Influencers)। আর এখন রয়েছে ইন্টারনেটের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম। ইন্টারনেট ব্লগিং থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম - ফেসবুক, এক্স, ইনস্টাগ্রাম ইত্যাদি।
এগুলো বিশ্বের মানুষের জীবনধারা ও সংস্কৃতি বদলে দিয়েছে। আর, আমেরিকার সংস্কৃতিতে এই বদলের চিত্র সবচেয়ে প্রকট। যারা এই তথ্য বিস্তারের যন্ত্রগুলো নিয়ন্ত্রণ করে তারাই আমেরিকানদের সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রণ করে। তাই আপাতত দৃষ্টিতে মনে হতে পারে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বজুড়ে প্রতিপত্তি প্রতিষ্ঠার জন্য যে যুদ্ধবাজ আগ্রাসী নীতি গ্রহণ করেছে প্রত্যেক আমেরিকান তার জন্য দায়ী আসলে ব্যাপারটি তা নয় বরং তাদের চিন্তাধারা নিয়ন্ত্রণকারী জায়নিস্টরা নিজেদের স্বার্থে এই কাজগুলো করেছে।
এক ছবিতে সম্প্রতি আল জাজিরার গবেষণায় যুক্তরাষ্ট্র যতগুলো যুদ্ধে জড়িয়েছে
আমেরিকানরা অনেকটাই অন্তর্মুখী। তাদের কাছে আমেরিকাই বিশ্ব। বাকি বিশ্ব যা করছে বা চিন্তা করছে তা নিয়ে আমেরিকানদের মাথা ব্যথা নেই। তাই আমেরিকার মিডিয়া নিয়ন্ত্রণকারীরা সহজেই আমেরিকানদের ধারনা, মতাদর্শ এবং সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ সহজেই হেরফের করতে পারে, নিজেদের স্বার্থে রূপদান করতে পারে।
তাহলে আমেরিকার মালিক কে? স্পষ্টতই, জায়নবাদী ইহুদিরা কারণ তারা বিভিন্ন মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। তারা বেশিরভাগ বড় বড় আমেরিকান করপোরেশনগুলোর মালিক। আসলে ইহুদি না থাকলে আমেরিকা আজকের মতো উন্নত হতো না। মিডিয়া এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে তারা রাষ্ট্রপতি নির্বাচন এবং তার মাধ্যমে সরকার নিয়ন্ত্রণ করে। আর তাই, আমেরিকান জনগণ ইসরাইল কর্তৃক পরিচালিত গণহত্যার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে পারে, কিন্তু আমেরিকান সরকার সর্বদা ইসরায়েলিদের পাশে থাকবে।
তবে, এই অবস্থার একটি বিপরীতমুখী দৃষ্টান্ত রয়েছে যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় চলমান হলোকাস্টকে স্মরণ করিয়ে দেয়। হিটলার শাসনভার গ্রহণের আগে ইহুদিরা জার্মান সমাজের প্রধান প্রতিপত্তির অধিকারী ছিল; বিষেশত অর্থনৈতিক দিক থেকে। হিটলার বিষয়টি ভালো চোখে দেখেনি এবং পরিশেষে তার মধ্যে ইহুদি বিদ্বেষী মনোভাব গড়ে ওঠে।
হলোকস্ট ছবিতে
এখন বর্তমান ইসরাইল হামাস সংঘাতকে কেন্দ্র করে জায়নবাদীদের মিথ্যাচার এবং মিডিয়ার উপর তাদের নিয়ন্ত্রণ খারাপভাবে মানুষের সামনে প্রকাশিত হচ্ছে। ফলে আমেরিকান যদি আবার জার্মানদের মতো মনে করা শুরু করে যে এই প্রতিপত্তির অবসান ঘটিয়ে নিজেদের মুক্তির কথা ভাবতে হবে। তাহলে ভবিষ্যতে আবার কি এক কালো অধ্যায় আসতে চলেছে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে অত্যাচারিত ইহুদিরা জনগণের জন্য।
কিন্তু একটা কথা মনে রাখা দরকার হলোকস্ট কোন যুক্তিতেই যৌক্তিক কিছু ছিল না। কেউ কাউকে যতই অপছন্দ করি কিন্তু হিটলার ইহুদীদের সাথে যে আচরণ করেছে তা কোনদিন কোন মানবিক পরিমন্ডলে গৃহীত হওয়ার সামান্যতম সুযোগ নেই।
টীকা
১. অ্যাংলো-স্যাক্সন (Anglo Saxon): এটি দ্বারা প্রধানত ইংল্যান্ড দ্বীপবাসীদের বোঝায়। এরা ঐ দ্বীপের আদিবাসী এবং উত্তর জার্মানির স্যাক্সনদের সমন্বয়ে গঠিত।
2. জায়নবাদী ইহুদি (Zionist Jews): জায়নবাদ হলো ইহুদিদের জন্য স্বতন্ত্র জাতিরাষ্ট্রের মতবাদ। জায়নবাদী হতে ইহুদি হওয়ার প্রয়োজন নেই, যে কেউ উক্ত মতবাদে বিশ্বাসী হলে হয়। আবার সব ইহুদি জায়নবাদে বিশ্বাস করে না।