ডিঙ্গো ও অস্ট্রেলিয়ার সর্বোচ্চ পর্যায়ে শিকারি

Emadul Mubin
By -
0

ডিঙ্গো, কুকুরের মত দেখতে এই প্রাণী অস্ট্রেলিয়ার বনজঙ্গলের খাদ্য চক্রের সবচেয়ে উপরের সদস্য। মুলত অস্ট্রেলিয়া নামক দ্বীপটির বুকে বাঘ-ভাল্লুক কিংবা সিংহের ন্যায় নয়ানাভিরাম ভয়ংকর শিকারি না থাকায় ডিঙ্গো সেই স্থান দখল করেছে। এরা দল বেঁধে শিকার করে এবং ক্যাঙ্গারু এদের প্রধান খাদ্য। দুই পায় চলা ক্যাঙ্গারু কিং হাঁসের মতো দেখতে প্লাটিপাস, অস্ট্রেলিয়ার বিচিত্র প্রাণী জগতের মধ্যে ডিঙ্গোকেই হয়তোবা মানুষের কাছে বেশি পরিচিত মনে হয়। কারণ এদের সমজাতীয় কুকুর পৃথিবীর সব জায়গাতেই পাওয়া যায়।

কুকুরেরই সমজাতীয় ডিঙ্গো

তবে মজার ব্যাপার হলো, খাদ্য চক্রে এরা সবার উপরে থাকলেও এরা কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার স্থানীয় প্রাণী নয়। অর্থাৎ প্লাটিপাস, ক্যাঙ্গারু কিংবা ইমুর মতো প্রাণী অস্ট্রেলিয়ার স্থানীয় এবং পৃথিবীর অন্য কোথাও এদের দেখা মেলে না। ডিঙ্গোর ক্ষেত্রে বিষয়টি তেমন নয়। এরা মূলত প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে আ্যবরজিনালদের সাথে করে ইন্দোনেশিয়া-পাপুয়া নিউগিনি দ্বীপ থেকে অস্ট্রেলিয়ায় আগমন করে। এরপর সময়ের পরিক্রমায় এরা সর্বোচ্চ পর্যায়ের শিকারিতে পরিণত হয়েছে। তবে এই ডিঙ্গোদের প্রতিরোধ করার জন্য অস্ট্রেলিয়ার সরকার পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘ সীমান্ত বেড়া নির্মাণ করেছে।

ডিঙ্গো ফেন্স

অস্ট্রেলিয়ার অধিকাংশ জনবসতি প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ দ্বীপটির পূর্বদক্ষিণ অঞ্চলে বসবাস করে। সিডনি, মেলবোর্ন, ব্রিসবেন, অ্যাডিলেড ও ক্যানবেরার মতো গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলো ঐ তটবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত। এর মূল কারণ হলো অস্ট্রেলিয়ার পূর্বদক্ষিণ অঞ্চল ছাড়া সবটুকুই প্রায় মরুভূমি ও অনুর্বর জমিতে পরিপূর্ণ। সুতরাং সেই উর্বর ভূমির সুযোগ নিয়েই সেখানে বিলিয়ন গবাদি পশুর খামার গড়ে উঠেছে। বিশেষ করে ভেড়া প্রতিপালন অস্ট্রেলিয়ার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির বড় একটা দিক। আর উনবিংশ শতাব্দীতে ডিঙ্গোরা এই ভেড়া শিকার করতো গনহারে। ফার্মের ভেড়ার মতো সহজ শিকার বাদ দিয়ে কেন তারা লাফিয়ে বেড়ানো ক্যাঙ্গারু ধরতে যাবে। এই ভেড়া খামার বাচানোর জন্যই হাজার কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ডিঙ্গো ফেন্স নির্মাণ করা হয়।

ডিঙ্গো ফেন্স নিয়মিত সংস্কার করা হয়

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অংশীদার হলেও ডিঙ্গো ফেন্স প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণ। যেমন ধরা যাক সুন্দরবনের নয়নাভিরাম নিরীহ হরিণ রক্ষা জন্য বাঘগুলোকে একটা নির্দিষ্ট বেষ্টনীতে আবদ্ধ করে রাখা হয়। তাহলে কয়েক দশক পর দেখা যাবে হরিণ আর অন্যান্য তৃণভোজীরা সুন্দরবনকে মরুভূমি বানিয়ে ফেলেছে। এরা যে শুধু ঘাস বা লতা পাতা খেয়েছে তা নয়, বড় বড় গাছের চারাগাছও সাবাড় করে দিয়েছে। সুতরাং শিকার ও শিকারির চক্র বন রক্ষার অন্যতম প্রধান মাধ্যম।

অস্ট্রেলিয়ায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ বেড়েই চলেছে

প্রায় ৫৬০০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ডিঙ্গো ফেন্স অস্ট্রেলিয়ার পূর্বদক্ষিণ অঞ্চলে ডিঙ্গোর সংখ্যা একেবারেই কমিয়ে দিয়েছে। ফলশ্রুতিতে ক্যাঙ্গারু ও অন্যান্য তৃণভোজী প্রাণীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য হুমকির মুখে পড়েছে। সুতরাং সিংহের মতো মোহনীয় না হলেও ডিঙ্গোর ভূমিকা অস্ট্রেলিয়ায় আফ্রিকান সিংহের চাইতে কম নয়।


Tags: #DingoFence #Australia #Longestfence #Biodiversity #ডিঙ্গো #অস্ট্রেলিয়ার 

Tags:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)