টেকসই ভবন নির্মাণে কাঠের ব্যবহার

Emadul Mubin
By -
0

টেকসই ভবন নির্মাণের অর্থ এই নয় যে এমন ভবন নির্মাণ করা যা শত বছর টিকে থাকবে। বরং টেকসই উন্নয়নের সাথে সুর মিলিয়ে এর অর্থ হলো এমন ভবন নির্মাণ করা যা পৃথিবীর আয়ু হ্রাসের কারণ হবে না। বর্তমান পৃথিবীর অর্ধেকের বেশি মানুষ শহরে বসবাস করে এবং ২০৫০ সাল নাগাদ এই অনুপাত বেড়ে ৬৮ শতাংশে পৌঁছাবে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি মানে শহরের আকৃতি বৃদ্ধি, তার সাথে তাল মিলিয়ে বৃদ্ধি পাবে কংক্রিট ও ইস্পাতের হরেকরকম অবকাঠামো। উল্লেখ্য, এতদুভয়ের উৎপাদন প্রক্রিয়া বিশ্বে ৮% কার্বন নিঃসরণের জন্য দায়ী। একইসাথে ঢাকার মতো শহরে কংক্রিট সংশ্লিষ্ট ইট, বালু, সিমেন্ট শহরের দূষণের বড় কারণ। তাহলে এই সমস্যার প্রতিকার কি? আমরা তো আর শহরের আকৃতি বৃদ্ধি বন্ধ করে দিতে পারি না।

২০১৮ সালে নরওয়েতে একদল ইঞ্জিনিয়ার ৮৫ মিটার উঁচু একটি ভবন নির্মাণ করেছেন, যে ভবনের প্রায় পুরোটাই ছিল কাঠের তৈরি। অন্যদিকে সম্প্রতি শিকাগোতে ২২৫ মিটার উঁচু কাঠের তৈরি ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে, যা উচ্চবিলাসী কিন্তু সম্ভব বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, প্রথমত, এই ভবন নির্মাণে একক বৃহদাকায় কাঠের খন্ড ব্যবহার করা হয় না। বরং তক্তাকৃতি বা তুলনামূলক ছোট টুকরোকে আঠা দিয়ে একসাথে লাগিয়ে বড় পিলার ও পাঠাতনের মত ভবনের গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক কাঠামো তৈরি করা হয়। আর কাঠের তৈরি এই কাঠামো ইস্পাত কংক্রিটের কাঠামো থেকে মোটেও কম শক্তিশালী নয়।

এখন কথা হলো কাঠকে যদি প্রধান নির্মাণ সামগ্রী হিসেবে ধরা হয় তাহলে এর চাহিদা পূরণ করা সম্ভব কিনা? ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটি গবেষক মাইকেল রামেজ বলেন আমরা এটা কোন সমস্যাই না। কারণ একটা ফ্যামিলি-সাইজ এপার্টমেন্ট তৈরি করতে ৩০ কিউবিক মিটার কাঠ প্রয়োজন। আর পরিসংখ্যান বলছে ইউরোপের বনজঙ্গলে প্রতি সাত সেকেন্ডেই ঐ পরিমাণ কাঠ উৎপন্ন হয়। তবে এরজন্য টেকসই পরিকল্পনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদিকে, জার্মানির পটডম ইনস্টিটিউটের প্রতিবেদন বলছে, ভবনের কাঠামোর জন্য ব্যবহৃত কাঠে কার্বনের অগ্নি নিরোধক স্তর (Charring Layer) যোগ করা যায়। ফলে আগুনে দগ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে আসবে।

তবে পরিবেশবান্ধব টেকসই শহর নির্মাণ‌ে কাঠের তৈরি ভবন সকল সমস্যার সমাধান নয়। বরং একটা বৃহৎ লক্ষ্য অর্জনের পথে ক্ষুদ্র প্রয়াস মাত্র। এর জন্য প্রয়োজন বাস্তবমুখী পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়ন। একইসাথে প্রয়োজন প্রকৃতির প্রতি কৃতজ্ঞতার মানসিকতা পোষণ। আর এই মানসিকতা তখন আসবে যখন আমরা আমাদের প্রতিটি কাজ কিভাবে পৃথিবীকে প্রভাবিত করে তা নিয়ে সচেতন থাকবো।

Tags: Sustainability, Sustainable Development, Cliamte Change, Wooden Structure, Construction, Future Cities//স্থায়িত্ব, টেকসই উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তন, কাঠের কাঠামো, নির্মাণ, ভবিষ্যত শহর

Tags:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)