মুসলিম মননের ইলমি জিহাদের রসদ

Emadul Mubin
By -
0
সবাইকে জ্ঞান চর্চা করে মহান আলেম হতে হবে ইসলাম এমনটি বলে না। বরং যতটুকু না জানলেই নয় তা জানা ফরজ। তারপরও কোনো বইয়ের শিরোনাম জানা থাকলে সেই বইটি পড়ার জন্য নিজের মধ্যে আগ্রহ কাজ করে। আর ইসলামী গ্রন্থাবলী পড়ার ব্যাপারে সেই আগ্রহ থাকা চরম সৌভাগ্যের বিষয়। তাই ইসলামের আকরিক গ্রন্থ ও আধুনিক মুসলিম মনন বিকাশে শিরোধার্য কিছু গ্রন্থের শিরোনাম ও সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিয়ে এই মূল্যায়নধর্মী তালিকা-প্রবন্ধ রচিত।

উল্লেখিত অধিকাংশ গ্রন্থ Google-এ সার্চ করলে আরবি ও ইংরেজি ভাষায় পাওয়া যায়। এছাড়া অনেক গ্রন্থ ইসলামী ফাউন্ডেশন বা অন্যান্য প্রকাশনা কর্তৃক বাংলায় অনূদিত হয়েছে।

১. আল কোরআন:

এই তালিকায় পবিত্র কোরআনকে উল্লেখ করার কোনো প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না, কারণ এই কিতাব তো মুসলমানদের জীবনের সহজাত বিষয়াদির অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু বর্তমানে তারা তা থেকে এতো দূরে আছে যে তাদেরকে বারংবার এই মহাগ্রন্থ সম্পর্কে স্মরণ করিয়ে দেওয়া আবশ্যক। এই কিতাব একগুচ্ছ মানুষকে একটা বিশাল সাম্রাজ্যে পরিণত করেছিল এবং আবারও করবে। বিশ্বব্যবস্থাকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে নবজন্ম দানে নিমিত্তে এর অবতারণা। তাই, নিয়মিত পড়ুন, অর্থ না বুঝলে অনুবাদ পড়ুন। আপনি কোরআনকে রক্ষা করতে পারবেন না, কিন্তু কোরআন ঠিকই আপনাকে রক্ষা করবে।

আল কোরআন

২. তাফসির ইবনে কাসির:

পবিত্র কোরআনের ভিতর ছড়িয়ে আছে অসংখ্য মনি-মুক্তা যা আহরণ করা সাধারণ পাঠকের ক্ষমতার বাইরে, তবে মুফাস্সিরগণ সেই অমূল্য সম্পদ শৈল্পিক নৈপুণ্যে সাজিয়ে সকলের নাগালে এনে দিয়েছেন। আর এই মনি-মুক্তাগুলোই পবিত্র কুরআনের সাথে সবচেয়ে গভীর সম্পর্ক স্থাপনের প্রতীক। তাফসির ইবনে কাসির এই দিক দিয়ে সবচেয়ে অগ্রগণ্য আকর গ্রন্থ। ১৩শ শতাব্দীতে রচিত এই গ্রন্থ আজও অম্লান। পড়ার সুযোগ না থাকলেও সংগ্রহে রাখুন, হয়তোবা এতেই পড়ার সুযোগ তৈরি হবে। [PDF Link]

এছাড়াও তাফসিরের কিতাবগুলো মধ্যে উল্লেখযোগ্য,

৩. তাফসিরে মা'আরেফুল কোরআন, হযরত মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ শফী (রহ.) কর্তৃক রচিত।[PDF Link]
৪. ফী জিলালিল কুরআন, অর্থ: আল কুরআনের ছায়ার নিচে, রচনায় সাইয়েদ কুতুব।[PDF Link]
৫. তাফহিমুল কোরআন, আবুল আ'লা মওদুদী কর্তৃক রচিত। [PDF Link]

উল্লেখিত কিছু তাফসির গ্রন্থ নিয়ে বিভিন্ন অঙ্গনে বিতর্ক থাকলেও এদের যোগ্যতা রয়েছে আধুনিক বিভিন্ন বিষয়কে কোরআনের আলোকে উপস্থাপন করার। তাই এদের উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রিয় নবী (সা)-এর হাদীসের আলোচনায় যে সব গ্রন্থ প্রয়োজনীয়:

৬. সহীহ বুখারী। এবং ৭. সহীহ মুসলিম।
গ্রহণযোগ্যতার বিচারে সন্দেহ মুক্ত এই দুই গ্রন্থ হজরত মুহাম্মদ (সা:)-এর সাথে আমাদের সম্পর্ককে সুদৃঢ় করে আসছে হাজার বছরের বেশি সময় ধরে। আর একমাত্র নবী (সা:)-এর সাথে সম্পর্ক সুদৃঢ় হলেই আল্লাহর সাথে সম্পর্ক সুদৃঢ় সম্ভব; তাই এতদুভয় বাদ দিয়ে মুসলমানদের নিস্তার নাই। [Read Online]

৮. আরবায়িন আননাববী:

ইমাম নববী রহ. কতৃক সংকলিত ৪০টি হাদীস সংবলিত এই গ্রন্থ মুসলমানদের ইমান বৃদ্ধি করে, তা মজবুত করে। একবার হলেও পড়া উচিত, ভুলে গেলে আবার নতুন করে পড়া উচিত। [Read Online]

৯. শামায়েলে তিরমিজী:

ইমাম তিরমিজী রহ. কতৃক সংকলিত এই হাদীস গ্রন্থ রাসূল (সাঃ) কাছ থেকে চেনার জন্য এক অতুলনীয় উৎস। রাসূল (সাঃ) শারীরিক বর্ণনা, পোশাক এমনকি তার চুল, পাগড়ি, হাটার স্টাইল সবই এতে স্থান পেয়েছে। কোনো মানুষের এর চেয়ে বিশদভাবে কোনোকালেই বর্ণিত হয়নি। [Read Online]

১০. স্টাডিস ইন আর্লি হাদীস লিটারেচার, মুহাম্মদ মোস্তফা আজমী:

হাদীস চর্চা ও সংরক্ষণের ব্যাপারে পূর্বতন আলেমগণ যে অভূতপূর্ব কসরত দেখিয়েছেন তার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে এই কিতাবে। লেখক এখানে প্রাচ্যবিদদের ভুল ধারণা ও অযাচিত দাবি বিদূরিত করেছেন। হাদিস সংকলনের ব্যাপারে ঐ কসরত সম্পর্কে জানা থাকলে একজন মুসলমান ইসলামী জ্ঞান চর্চার ইতিহাস সম্পর্কে সদা সচেতন থাকবে অবশ্যম্ভাবীভাবে; পূর্বতন আলেমগণের প্রচেষ্টা সম্পর্কে জানতে পারব। ফলশ্রুতিতে তাঁদের প্রতি সম্মানবোধ আরো বৃদ্ধি পাবে। তাই, এই বইটি অধ্যয়ন অন্য রকমভাবে জরুরি। [PDF Link]
স্টাডিস ইন আর্লি হাদীস লিটারেচার, মুহাম্মদ মোস্তফা আজমী

এছাড়া, আকাইদ, ফিকহ, তারিখ (ইতিহাস), ও আরবী ভাষা সম্পর্কিত বিভিন্ন গ্রন্থ এখানে উল্লেখ করার দাবি রাখে। কিন্তু প্রবন্ধের আয়তনের খাতিরে তা উল্লেখ করা বাঞ্ছনীয় নয়। তবে যারা ইসলামী জ্ঞান চর্চার ঐতিহ্যের সাথে সবেমাত্র পরিচিত হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাদেরকে এই প্রবন্ধটি সহায়তা করবে। তবে ইসলামী জ্ঞান চর্চা ঐতিহ্য শুধু বই পড়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় বরং জ্ঞান দ্বারা বিনয়বোধ সৃষ্টি ও জ্ঞাত বিষয় মান্য করা পর্যন্ত বিস্তৃত।

এখন এই প্রবন্ধটি অপূর্ণ থেকে যাবে যদি আধুনিক মুসলিম মননকে শাণিতকারী কিছু গ্রন্থের কথা এখানে উল্লেখ না করা হয়। তবে এই বইগুলো উপন্যাসের মতো ধারাবাহিকভাবে না পড়ে সময় নিয়ে উপলব্ধি করে পড়তে হবে। এতে করে যদি একই সময়ে একাধিক বই পড়া হয় তাতে ক্ষতি নেই। অর্থাৎ একবার একটি বইয়ের কিছু পৃষ্ঠা আবার অন্য একটি বইয়ের কিছু পৃষ্ঠা; ধারাবাহিকতার চেয়ে উপলব্ধি বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

১১. A Young Muslim's Guide To Religions in The World

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. সাইয়েদ সাজ্জাদ হোসেইন রচিত এই গ্রন্থ বিশ্বের প্রধান ধর্মগুলো সম্পর্কে একজন সাধারণ পাঠকের দৃষ্টি খুলে দিবে। মূলত তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের উপর এই বইটি রচিত। এই বইয়ের ভূমিকা অসাধারণ ভাবে বইটির উদ্দেশ্য বর্ণিত হয়েছে। কারণ ধর্মগুলো পাশাপাশি নাস্তিকতাবাদ আধুনিক মুসলিম যুবকদের মননকে সদা প্রভাবিত করে। কেমন যেন অজ্ঞেয়বাদ হলো আধুনিকতা সবচেয়ে বড় নিদর্শন। [Rokomari Link]

১২. A Young Muslim Guide to the Modern World

ইরানি লেখক ড. সাইয়েদ হোসেইন নাসর রচিত এই বই আধুনিক যুগের যুবকদের জন্য এক অসাধারণ দিকনির্দেশনা। [PDF Download Link]

১৩. Islam at the Crossroads

মোহাম্মদ আসাদ রচিত এই বইটি পাঠকের ঘুমিয়ে থাকা চেতনাকে নাড়া দিবে; মূলত ঘুমিয়ে থাকা মুসলিম চেতনাকে।[PDF Link]
Islam at a crossroad

১৪. Lost Islamic History

এই বইটি পড়লে একজন মুসলমানের মনে তার অতীত ঐতিহ্য নিয়ে গর্ববোধ তৈরি হবে নিশ্চিতভাবে। লেখক তার বইটিকে ওই ভাবেই সাজিয়েছেন। এই বইয়ের সাবলীলতা একজন পাঠককে ইতিহাস পাঠে আনন্দ দিবে। [Rokomari Link]
Lost Islamic History

১৫. Destiny Disrupted

তবে ইতিহাস পড়ে গর্ববোধ করে বেশি লাভ নেই কারণ গত কয়েক শতাব্দী যাবত মুসলমানদের ভাগ্য সুপ্রসন্ন নয়। সেই দুর্ভাগ্য নিয়েই আলোচনা করা হয়েছে এই বইয়ের। যদিও বইটি মূলত একটি সহজ সরল ইতিহাস গ্রন্থ। যারা ইতিহাস পড়তে গিয়ে তথ্যসূত্রের গ্যাড়াকলে পড়তে চান না তাদের জন্যই এই গ্রন্থটি। একইসাথে এটি মুসলিমদের চোখ দিয়ে পৃথিবীর ইতিহাসকে দেখার চেষ্টা করা হয়েছে।[Rokomari Link]

Destiny Disrupted

বইয়ের তালিকা শুরু করলে তা শেষ করা সম্ভব নয়। যেমন এখন থেকে ১২শত বছর আগে আব্বাসীয় যুগে ইবনু নাদিম আল-ফিহরিসত গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। এই বইটিতে বিভিন্ন বিষয়ের বইয়ের শিরোনাম, লেখকের নাম এবং বই সম্পর্কে সামান্য বর্ণনা রয়েছে। এখন ঐ সময় তথা ৮৫০ সালের দিকে রচিত ঐ বইয়ে পৃষ্ঠা সংখ্যা চারশতের কাছাকাছি। তাহলে এটা মাথায় আনা দুস্কর যে কি পরিমাণ গ্রন্থ ঐ সময় রচিত হয়েছিল। এমনকি সমসাময়িক সব বই যে ইবনু নাদিম তার গ্রন্থে স্থান দিয়েছেন এমনটা নয়। তাহলে হাজার বছর পরে কি পরিমাণ গ্রন্থ রচনা হয়েছে তা হয়তো কেউ জানে না।

তারপরও এই প্রবন্ধের উদ্দেশ্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু বই সম্পর্কে পাঠকদের ধারণা দেওয়া। এটা কোনো বুক রিভিউ নয়। শুধু ইসলামী জ্ঞান চর্চার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টির একটি নগণ্য প্রচেষ্টা। তবে বই পড়ার ব্যাপারে সবচেয়ে বড় পরামর্শ হলো সরাসরি বই পড়া ভালো পিডিএফ থেকে।
Tags:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)