১. মক্কার মসজিদে হারাম
মসজিদে হারাম আয়তন ও ধারণক্ষমতার দিক দিয়ে পৃথিবীর বৃহত্তম মসজিদ। এখানে প্রত্যহ অবিরত নামাজ আদায় চলতে থাকে। একইসাথে হাজার হাজার মানুষ কাবা শরীফের তাওয়াফ করতে থাকে। এই পবিত্র মসজিদের চত্বরগুলো হাজী, ওমরাহকারী, মুসল্লি ও দর্শনার্থীদের ভিড়ে পূর্ণ থাকে। এটাই পৃথিবীর একমাত্র গোলাকার মসজিদ।
![]() |
Image Source: Saudi Press Agency |
প্রায় ৩ লক্ষ ৫৬ হাজার বর্গমিটার জুড়ে বিস্তৃত এই মসজিদটির মূল প্রাঙ্গণে প্রায় ৮ লক্ষ মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারে। তবে রমজান ও হজ্জের সময় এই সংখ্যা ১০ লক্ষাধিকে পৌঁছে যায়। তবে ভবিষ্যতের উন্নয়ন পরিকল্পনা অনুযায়ী এই মসজিদের মূল প্রাঙ্গণেই ২৫ লক্ষাধিক মুসল্লি নামাজ পড়তে পারবে।
২. মদিনার মসজিদে নববী
মসজিদে নববী ইসলামের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থান। এই মসজিদের প্রথম ইমাম ছিলেন হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)। এই মসজিদের সাথে সংলগ্ন মহানবীর রওজা। তার প্রিয় বন্ধুদ্বয় আবু বকর ও ওমর (রাঃ) তার পাশেই শায়িত।
![]() |
Image Source: Saudi Press Agency |
নয়নাভিরাম স্থাপত্যকলা ও কারুকার্যে পরিপূর্ণ এই মসজিদটি একই সাথে আধুনিক প্রযুক্তির ও ব্যবস্থাপনা অসাধারণ নিদর্শন। এতদসত্ত্বেও এই মসজিদের সবুজ গম্বুজটাই যে মসজিদটির আসল পরিচায়ক। সম্প্রতি সৌদি সরকার মসজিদটির উন্নয়ন ও ধারণক্ষমতা বৃদ্ধির পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। যার ফলে অচিরেই এই মসজিদে ২০ লক্ষাধিক মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবে।
৩. আল-আকসা মসজিদ
মুসলমানদের প্রথম কিবলা, রাসূল (সাঃ) মিরাজের স্মৃতি বিজড়িত স্থান। মসজিদে হারাম ও মসজিদে নববীর পর ইসলামের তৃতীয় পবিত্রতম স্থান মসজিদে আকসা।
![]() |
আল আকসা প্রাঙ্গণের ব্যাখ্যা-চিত্র; Image Source: Islamic Landmarks |
তবে মসজিদে আকসা নির্দিষ্ট কোনো স্থাপনা নয় বরং একটি প্রাঙ্গণের সমন্বয় যা কুদস তথা জেরুজালেম শহরের নির্দিষ্ট একটি এলাকা নিয়ে গঠিত। ঐতিহাসিকভাবে নির্ধারিত ঐ প্রাঙ্গণে একাধিক মসজিদ ও স্থাপনা রয়েছে। প্রায় ১ লক্ষ ৫০ হাজার বর্গমিটার জুড়ে বিস্তৃত এই প্রাঙ্গণে প্রধান দুই স্থাপনা হলো কুব্বাতুস সখরা (Dome of the Rock) ও মসজিদে কিবলি। এই প্রাঙ্গণে প্রায় দশ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করে থাকেন।
৪. কাসাব্লাংকার দ্বিতীয় হাসান মসজিদ
কাসাব্লাংকার দ্বিতীয় হাসান মসজিদটি আকৃতি, আয়তন, কারুকার্য ও অবস্থানের দিক দিয়ে আধুনিক যুগের মুসলিম স্থাপত্যকলার পতাকাবাহক।
![]() |
দ্বিতীয় হাসান মসজিদ, ক্যাসাব্ল্যাঙ্কা, মরোক্কো; Image Source: Wikimedia Commons |
হাজার বছর ধরে চলমান মরোক্কো ও পূর্বতন আন্দালুসের স্থাপত্য ঐতিহ্যের ফলাফল এই মসজিদটি। এছাড়া এই মসজিদের ২০০ মিটার উঁচু মিনার বহুদূরের মুসল্লিদের ডাকে। এই মসজিদের মূল স্থাপনার ভিতরে প্রায় ২৫ হাজার মুসল্লির পাশাপাশি মসজিদের আশেপাশের প্রাঙ্গণে আরও ৮০ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারে। আটলান্টিক মহাসাগরের তীরের এই মসজিদটিতেই সমুদ্র আর ভূমি মিলিত হয়।
৫. আলজেরিয়ার গ্রান্ড মসজিদ
বিশ্বে তৃতীয় বৃহত্তম এই মসজিদটি নির্মাণ করা হয় অতি সম্প্রতি। ২০০ বর্গমিটার জায়গা নিয়ে বিস্তৃত এই মসজিদটির ধারণক্ষমতা ২ লক্ষাধিক। এর মিনারের উচ্চতা ২৬৫ মিটার।
![]() |
আলজেরিয়ার গ্রান্ড মসজিদ, আলজিয়ার্স, আলজেরিয়া; Image Source: Pinterest |
মসজিদটির বৃহদকায় নামাজ কক্ষটি ফুলেল নকশা সংবলিত নীল কার্পেটে আচ্ছাদিত যা একটি স্থানীয় ঐতিহ্যবাহী চরিত্রের পরিচয় বহন করে। আর সেই মূল নামাজ কক্ষটি আয়তনে ২০ হাজার বর্গমিটার।
৬. মিশরের আমর ইবনুল আস মসজিদ
কায়রোয় অবস্থিত এই মসজিদটি আফ্রিকা মহাদেশে স্থাপিত প্রথম মসজিদ। ৬৪১ সালে প্রতিষ্ঠিত এই মসজিদটি অসংখ্য পুনঃনির্মাণ ও সংস্কারের মাধ্যমে বর্তমান অবস্থায় পৌঁছেছে। এর নামকরণ করা হয়েছে বিখ্যাত সাহাবি ও মিশর বিজয়ী বীর আমর ইবনুল আস (রাঃ)-এর নামে।
![]() |
আমর ইবনুল আস মসজিদ, কায়রো, মিশর; Image Source: Pinterest |
এই মসজিদটির মূল স্থাপনার আয়তন প্রায় ১৪ হাজার বর্গমিটার। এছাড়া এর আশপাশের জায়গা মিলিয়ে প্রায় আড়াই লক্ষ মুসল্লি এই মসজিদে নামাজ আদায় করতে পারে।
৭. তুরস্কের আয়া সোফিয়া মসজিদ
আয়া সোফিয়া মসজিদ ইস্তাম্বুলের স্থাপত্যের মাস্টারপিস, প্রথমে গির্জা তারপর মসজিদ তারপর যাদুঘর তারপর আবার মসজিদ, যুগের পরিবর্তনে নানা রূপ ধারণ করা এই স্থাপনাটি ষষ্ঠ শতাব্দীতে নির্মিত।
![]() |
আয়া সোফিয়া মসজিদ, ইস্তাম্বুল, তুরস্ক; Image Source: Pinterest |
অর্থাৎ রোমান আমলে গির্জা হিসেবে নির্মিত এই স্থাপনাটি উসমানীয় আমলে মসজিদে রূপান্তরিত হয়। অতঃপর কামাল আতাতুর্কের নব্য তুর্কি প্রজাতন্ত্রে মসজিদ থেকে জাদুঘরে পরিণত হওয়ার পর ২০২২ আবার তা মসজিদে ফিরিয়ে নেওয়া হয়। বর্তমানে আয়া সোফিয়া মসজিদ হওয়ার পাশাপাশি আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র বটে।
৮. ভারতের দিল্লি জামে মসজিদ
১৬৫৬ সালে নির্মিত দিল্লি জামে মসজিদ সম্রাট শাহজাহানের আমলের স্থাপত্যকলার প্রতিনিধি। ২৫ হাজার মুসল্লির ধারণক্ষমতা সম্পন্ন এই মসজিদটি ভারতের বৃহত্তম মসজিদ। প্রায় ৬ বছর ধরে ৫ হাজার শ্রমিক পরিশ্রমের ফসল এই মসজিদ।
![]() |
দিল্লি জামে মসজিদ, দিল্লি, ভারত; Image Source: Reddit |
৯. ইন্দোনেশিয়ার স্বাধীনতা মসজিদ
রাজধানী জাকার্তায় অবস্থিত এই মসজিদটি ইন্দোনেশিয়ার স্বাধীনতার প্রতীক। এই মসজিদে ২ লক্ষেরও বেশি মুসল্লি একসাথে নামাজ আদায় করতে পারে।
![]() |
মসজিদ ইসতিকলাল, জাকার্তা, ইন্দোনেশিয়া; Source: Google Maps |
১০ হেক্টর জমির উপর নির্মিত এই মসজিদটির প্রধান কক্ষে ১২ টি পিলার আছে, যা নবী সা এর জন্ম তারিখের দিকে নির্দেশ করে। এই মসজিদটির সামগ্রিক আকৃতি ও নকশা একটি স্বতন্ত্র স্থাপত্যশৈলীর প্রকাশক। এছাড়া এই মসজিদের দেয়াল জ্যামিতিক নকশার কারুকার্যে পরিপূর্ণ।
![]() |
মসজিদ ইসতিকলালের অভ্যন্তর; Source: Google Maps |
মসজিদ মুসলমানদের ঈমান, আমল ও ঐতিহ্যের ধারক বাহক। একজন মুসলিম যেখানেই থাকুক না কেন সে একটা মসজিদ খুঁজে নেবেই। যদি খুঁজে না পায় তাহলে নিজের পায়ের কাছে জমিনকে সে মসজিদে রূপান্তরিত করবে। কারণ, আল্লাহ তায়ালা সমগ্র জমিনকে মুসলমানদের জন্য মসজিদ হিসেবে ঘোষণা করেছেন।