দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক বোমার ব্যবহার পৃথিবীব্যাপী এক নতুন ত্রাসের জন্মদান করে। কিন্তু পারমাণবিক শক্তি ওই ত্রাস সৃষ্টির পাশাপাশি এক নতুন দিগন্তের সূচনা করে। তাই পৃথিবীতে আবিষ্কৃত এই পারমাণবিক শক্তি সম্পর্কে ভয় ও আশা নিয়েই সৃষ্টি হয় আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা। ১৯৫৭ সালে প্রতিষ্ঠিত IAEA - International Atomic Energy Agency তথা আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা পারমাণবিক শক্তি বিষয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গবেষণা প্রতিষ্ঠান।
এই প্রতিষ্ঠানটি সৃষ্টির এই সংস্থাটি প্রতিষ্ঠার সূচনা লগ্ন হিসেবে বিবেচনা করা হয় ৮ ডিসেম্বর, ১৯৫৩ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট আইজেনহাওয়ার প্রদত্ত "Atoms for peace" ভাষণকে কেন্দ্র করে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট আইজেনহাওয়ার; Getty Images |
IAEA পারমাণবিক প্রযুক্তি ও এর বিতর্কিত প্রয়োগের সাথে দৃঢ়ভাবে সম্পর্কযুক্ত। এমনকি পারমাণবিক অস্ত্র থেকে শুরু করে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কিংবা অন্যান্য বিষয় এর অন্তর্ভুক্ত। ১৯৫৩ সালে আইজেনহাওয়ার তার বক্তৃতায় যে ধারণাগুলি নির্দেশ করেছিলেন তা IAEA-এর সংবিধি গঠনে বিশেষভাবে সাহায্য করেছিল। ঐ সংবিধি ১৯৫৬ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে পাস হয়েছিল। মূলত, ১৯৫৭ সালের ২৯ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে এই সংস্থাটি যাত্রা শুরু করে।
IAEA-এর প্রথম সাধারণ সম্মেলন, ১৯৫৭; Image Source: IAEA Website |
IAEA জাতিসংঘ পরিবারভুক্ত একটি সহযোগী সংস্থা। সূচনা লগ্ন থেকেই, এই সংস্থা নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে পারমাণবিক প্রযুক্তি গবেষণা, ব্যবহার ও প্রয়োগের নিয়ে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে কাজ করছে। IAEA এর সংবিধির দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এই সংস্থার দ্বৈত লক্ষ্য হলো, আণবিক শক্তির প্রচার ও নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করা, "এই সংস্থাটি সারা বিশ্বে শান্তি, স্বাস্থ্য ও সমৃদ্ধির জন্য পারমাণবিক শক্তির অবদানকে ত্বরান্বিত ও প্রসারিত করার চেষ্টা চালাবে। এই সংস্থাটি নিশ্চিত করবে, যতদূর সম্ভব, এর দ্বারা প্রদত্ত সহায়তা এমনভাবে ব্যবহার করা হবে না যাতে কোনো সামরিক উদ্দেশ্যকে চরিতার্থ করা যায়।"
১৯৫৭ সালের অক্টোবর মাসে, প্রথম সাধারণ সম্মেলনের প্রতিনিধিরা অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় IAEA-এর সদর দপ্তর স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৭৯ সালের আগস্টে ভিয়েনা ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার খোলার আগ পর্যন্ত, ভিয়েনা অপেরা হাউসের পাশের পুরানো গ্র্যান্ড হোটেলটি সংস্থাটির অস্থায়ী সদর দফতর হিসেবে পরিচিত ছিল। টরন্টো, কানাডা (১৯৭৯ সাল থেকে) এবং টোকিও, জাপানে (১৯৮৪ সাল থেকে) IAEA-এর দুটি আঞ্চলিক কার্যালয় রয়েছে।
১৯৭৯ সালের আগস্ট পর্যন্ত ভিয়েনা গ্র্যান্ড হোটেলে সংস্থাটির অস্থায়ী সদর দফতর; Image Source: IAEA Website |
বর্তমানে সংস্থাটির মোট সদস্য সংখ্যা: ১৭৮ (১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত)। বাংলাদেশ এর সদস্য পদ লাভ করে ১৯৭২ সালে।
নোবেল পুরস্কার হাতে IAEA এর মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলবারাদেই |
২০০৫ সালে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (IAEA) এবং এর মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলবারাদেই সমন্বিতভাবে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান। পারমাণবিক অস্ত্র যেভাবে বিশ্বকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছে তার থেকে পরিত্রাণের জন্য এই সংগঠনের ভূমিকা অপরিসীম।