পঞ্চচক্ষু বা Five Eyes (FVEY) বলতে ইংরেজি ভাষাভাষী পাঁচটি দেশ তথা যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার গোপন জোটকে বোঝায়। এই জোটভুক্ত দেশগুলো পরস্পরকে গোপন গোয়েন্দা তথ্যাদি আদান-প্রদানের মাধ্যমে সহায়তা করে। মূলত, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে বিশ্ব পরিমণ্ডলে এই জোটটি গোপনে কর্মতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। এমনকি ২০১৩ সালে এডওয়ার্ড স্নোডেন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা তথ্যাদি ফাঁস করার আগ পর্যন্ত এই জোট লোকচক্ষুর অন্তরালে ছিল।
পঞ্চচক্ষুর ইতিহাস
এই জোটের সূচনালগ্ন হিসেবে ধরা হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী ১৯৪৬ যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য চুক্তিকে। সেই চুক্তির মাধ্যমে দেশ দুটির মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদানের সিদ্ধান্ত হয়। পরবর্তীতে কানাডা ১৯৪৮ সালে, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড ১৯৫৬ সালে এই জোটভুক্ত হয়। মূলত স্নায়ু যুদ্ধের উত্তেজনা যত বৃদ্ধি পাচ্ছিল, পঞ্চচক্ষুর ভূমিকা ততবেশি জোরালো হচ্ছিল। সোভিয়েত ইউনিয়ন ও এর সমর্থক দেশগুলোর উপর নজরদারি এই জোটটির অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল। এছাড়া ঐ সময়ে তথা ১৯৮২ সালে যুক্তরাজ্য ও আর্জেন্টিনার মধ্যে সংঘটিত ফকল্যান্ড যুদ্ধ এই জোট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর পঞ্চচক্ষুর নজর পড়ে মধ্যপ্রাচ্যের উপর। এমনকি মধ্যপ্রাচ্য ২০০১ সালে শুরু হওয়া তথাকথিত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে (War on Terror) ন্যাটোর ভূমিকা নির্ধারণে পঞ্চচক্ষুর ভূমিকা সংঘাতের গতিপ্রকৃতির উপর বেশ প্রভাব রেখেছে। ২০১৩ সালে স্নোডেন বিভিন্ন জায়গায় পঞ্চচক্ষুর গোয়েন্দা তৎপরতা কথা ফাঁস করে দেন। এরপর ২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালত (ICJ) অস্ট্রেলিয়াকে পূর্ব তিমুরের উপর গোয়েন্দা নজরদারি চালাতে নিষেধ করে। এটাও ছিল পঞ্চচক্ষুর উপর প্রথম কোনো নিষেধাজ্ঞা।
যুক্তরাষ্ট্রের National Security Agency (NSA), যুক্তরাজ্যের Government Communications Headquarters (GCHQ) অস্ট্রেলিয়ার Australian Signals Directorate (ASD), কানাডার Communications Security Establishment (CSE) এবং নিউজিল্যান্ডের Govt. Communications Security Bureau (GCSB), এই সংস্থাগুলো পঞ্চচক্ষু তথা Five Eyes জোটের বিভিন্ন বিষয়াদি পরিচালনা করে।
পঞ্চচক্ষুর কর্ম পদ্ধতি
এই জোটটি তথ্য সংগ্রহের জন্য Signals Intelligence (SIGINT) পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকে। এই পদ্ধতিতে আধুনিক যোগাযোগে ব্যবহার বিভিন্ন যন্ত্রের সিগন্যাল থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। যদিও নীতিগতভাবে এই ধরনের তথ্য সংগ্রহ অবৈধ হওয়ার কথা কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে SIGINT ব্যবহারকারী দেশগুলো নিজেদের জাতীয় নিরাপত্তার দোহাই দেয়। SIGINT এর মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্য পঞ্চচক্ষুভুক্ত দেশগুলো নিজেদের মধ্যে বিনিময় করে। এমনকি এই পাঁচটি দেশের মধ্যে নিবিড় ও সুসম্পর্কের কারণে এরা তথ্যের পাশাপাশি নিজেদের গোয়েন্দা শক্তির বিনিময় করে। ফলশ্রুতিতে পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী গোয়েন্দা জোট হিসেবে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে পঞ্চচক্ষু পটপরিবর্তনকারী ভূমিকা পালন করে আসছে।
২০১৩ সালে এডওয়ার্ড স্নোডেনের ফাঁস করা তথ্যাদিতে পঞ্চচক্ষু নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য বের হয়। ফলে পৃথিবীব্যাপী এই জোট সম্পর্কে সমালোচনার ঝড় ওঠে। যদিও যুক্তরাষ্ট্র এককভাবে অনেক আগে থেকেই বিভিন্ন দেশে আড়িপাতার দোষে দুষ্ট ছিল। কিন্তু, পঞ্চচক্ষু সম্পর্কিত তথ্য এটা নিশ্চিত করে যে অন্যান্য চারটি দেশও অবৈধ পন্থায় তথ্য সংগ্রহের দোষে দুষ্ট।
This Article is in Bangla and it is about the secret intelligence alliance named Five Eyes.
References: