![]() |
আবু মোহাম্মদ আলজোলানির চোখে সিরিয়া |
![]() |
১৯৭১ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত শাসন করেছে আসাদ পরিবার, হাফেজ আল আসাদ ও বাসার আল আসাদ |
যাইহোক, বিদ্রোহীরা সম্প্রতি তাদের সামনে এক বড় সুযোগ দেখতে পায় যা আসাদের পতনের জন্য যথেষ্ট। সেই সুযোগটি হল আসাদের সকল আন্তর্জাতিক সমর্থক ও সাহায্যকারী নিজেদের যুদ্ধ নিয়ে ব্যস্ত।
২০২২ সাল থেকে, ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়া তার সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে। আসাদকে সমর্থন করার জন্য সিরিয়ায় ২০১৪ সালে পুতিন যেমন তৎপরতা দেখিয়েছিল, তার সামান্যতম তৎপরতা এবার দেখা যায়নি। বরং পুতিনের জাতীয় সেনাবাহিনীসহ রাশিয়ার বেশিরভাগ সামরিক সম্পদ দিয়ে ইউক্রেন আক্রমণ করেছে। এমনকি এই যুদ্ধে প্রতিদিন ব্যবহার করছে। সুতরাং আসাদকে সমর্থন দেওয়ার মতো রিসোর্স রাশিয়ার কাছে বর্তমানে নেই।
অন্যদিকে গত এক বছরে ইসরায়েলের সাথে তীব্র সংঘাতের কারণে ইরানের সক্ষমতা মারাত্মকভাবে সীমিত হয়েছে। ইরানের প্রাথমিক প্রক্সি লেবাননের হিজবুল্লাহ যে কিনা আসাদকে সমর্থন করার জন্য সরাসরি সিরিয়ার বিদ্রোহীদের বিপক্ষে যুদ্ধ করেছে সেই হিজবুল্লাহ ইসরাইলি সেনাবাহিনীর নিরলস পদক্ষেপ এবং বিমান হামলার কারণে উল্লেখযোগ্য ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।এই বাহ্যিক কারণগুলো ছাড়াও, আরেকটি প্রধান কারণ ছিল আসাদের সৈন্যদের মাঝে চরম হতাশা ও অর্থনৈতিক দুরবস্থা। এর কারণ ছিল সৈন্যদের অফিসাররা ছিল চরমভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত। তাছাড়া, গত দেড় দশকে পশ্চিমারা উপর বিভিন্ন অবরোধ চাপিয়ে রেখেছিল। ফলে সিরিয়ার অর্থনীতি একেবারেই ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে। এছাড়া সিরিয়ার উত্তরের তেল সমৃদ্ধ অঞ্চল কুর্দি বিদ্রোহীদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, যে বিদ্রোহীদের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি আঁতাত রয়েছে। ফলে সৈন্যদল পোষার মতো অর্থনৈতিক অবস্থা আসাদের ছিল না।
বিদ্রোহীরা সিরিয়ায় অগ্রসর হওয়ার জন্য সেই দুর্বলতার সুযোগ ব্যবহার করেছে এবং তাদের পরিকল্পনা সফল হয়েছে; তবে, তবে বিদ্রোহীদের জন্যও সিরিয়া দখলের এই প্রক্রিয়া মাসের পর মাস দীর্ঘ যুদ্ধের মাধ্যমে সম্পন্ন হতে পারত, কিন্তু তার প্রয়োজন পড়েনি। মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে তারা ফির সিরিয়ার গুরুত্বপূর্ণ শহর; দামেস্ক, আলেপ্পো ও হোমসের মতো শহর মাত্র দুই সপ্তাহের ব্যবধানে জয় করে ফেলেছে এবং বাসার আর আসাদকে দেশ থেকে বাধ্য করেছে।
এখন সিরিয়ার জন্য ভবিষ্যতে কি আছে তা বলা মুশকিল। বিদ্রোহীদের সংগঠন হায়াত তাহরীর আশশাম নিজেদের সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। কিন্তু একই সাথে উত্তরাঞ্চলের কুর্দিরা এবং দক্ষিণে ইসরাইল এই নবগঠিত সরকারের বিপক্ষে তৎপর ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে তো এখন সময় বলে দেবে সিরিয়াবাসী কি আসলেই শান্তির মুখ দেখবে কিনা!